শরিফ খাঁন
সারা দুনিয়ায় এখন আলোচনার বিষয় একটিই।
আর সেটি হলো ‘ব্রেক্সিট’। এই
ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে
আমি দেখেছি, আমাদের দেশের মানুষ
দুই-তিনটি মারাত্মক বিভ্রান্তিতে ভুগছেন।
একটি হলো, ব্রেক্সিট মানে কি, সেটি
অনেকের কাছে ধোঁয়াশা। ব্রেক্সিট
শব্দটি কীভাবে এলো সেটা নিয়েও
অনেকে অন্ধকারে আছেন। আরেকটি
বিষয় নিয়েও আমাদের দেশে বিভ্রান্তি
আছে। সেটি হলোÑ লন্ডন, ইংল্যান্ড,
ব্রিটেন, গ্রেট ব্রিটেন, ইউকে,
যুক্তরাজ্য ইত্যাদি নিয়ে। বিভ্রান্তিটা কত ব্যাপক
তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ঢাকার একটি নাম করা ও
পুরাতন পত্রিকায় ব্রেক্সিট সম্পর্কে
সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। এই
সম্পাদকীয়ের অনেক জায়গায় বলা
হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)
থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে যাচ্ছে। এই
কথাটি অনেক জায়গায় লেখা হয়েছে। ইইউ
থেকে কি শুধু ব্রিটেন বেরিয়ে যাচ্ছে?
নাকি গোটা ইউকেই বেরিয়ে যাচ্ছে?
আমার এই প্রশ্নে আপনাদের অনেকেও
অবাক হচ্ছেন, তাই না? অবাক হওয়ারই কথা।
তবে আমি শীঘ্রই বিষয়টি পরিষ্কার করে
দেব। তার আগে ব্রেক্সিট শব্দ নিয়ে দুটি
কথা।
বেশ কয়েক বছর আগে একটি শব্দ নিয়ে
কিছু শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি
লক্ষ্য করেছিলাম। ইংরেজি এই শব্দটি
হলো, Stagflation. অনেকে A T Dev
এর ডিকশনারি, সংসদ ডিকশনারি, বাংলা একাডেমির
ইংলিশ টু বেঙ্গলি ডিকশনারি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি
করেছেন। কিন্তু কোথাও এ শব্দটি খুঁজে
পাননি। আর পাবেন কীভাবে? এটি যে দুটি
শব্দের অপভ্রংশ। সেই অপভ্রংশ যোগ
করে একটি শব্দ করা হয়েছে। একটি শব্দ
হলো, Stagnation, আরেকটি হলো
Inflation. Stagnation মানে স্থবিরতা। আর
Inflation মুদ্রাস্ফীতি। Stagnation এর Stag
এবং Inflation এর flation, এই দুটি শব্দ
যোগ করে বানানো হয়েছে একটি নতুন
শব্দ। সেটি হলো Stagflation. শব্দটি
অর্থনীতির পরিভাষা হিসেবে এখন চালু
হয়েছে। অর্থ হলো, অর্থনীতিতে
স্থবিরতা এবং মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান থাকা।
কোনো দেশের অর্থনীতি যখন
স্থবিরতা এবং মূল্যস্ফীতিতে আক্রান্ত হয়
তখন বলা হয় যে, সেই অর্থনীতিতে
এখন ঝঃধমভষধঃরড়হ চলছে। এখন অবশ্য
আপনি এই শব্দটি বিশেষ বিশেষ ডিকশনারিতে
পাবেন। সেগুলো হলো, Chambers,
Webster, Collins, Cambridge প্রভৃতি
ডিকশনারির লেটেস্ট সংস্করণ।
ব্রেক্সিটও এমন একটি শব্দ। ইইউ থেকে
ইউকের বেরিয়ে যাওয়ার ইস্যুটিকে বলা হয়
ব্রেক্সিট। ইংরেজিতে Brexit. সবাই
জানেন, Exit মানে বেরিয়ে যাওয়া। Britain
এর Br এবং ExitÑ এই দুটি ইংরেজি সিলেবল
যোগ করে বানানো হয়েছিল ইৎবীরঃ.
এবার দ্বিতীয় বিভ্রান্তি নিয়ে দুটি কথা। আজ
অনেক পত্রিকাই লিখেছে, ইউরোপীয়
ইউনিয়ন বা ইইউ থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে
যাচ্ছে। আসলে ব্রিটেন নয়, গণভোটের
রায়ের ফলে সমগ্র ইউকের বেরিয়ে
যাওয়ার কথা। সমগ্র ইউকে বেরিয়ে যাবে
কিনা সেটি নিয়ে এখন চলছে নানান জল্পনা-
কল্পনা, নানান শঙ্কা ও ভয়। ইউকের পূর্ণরূপ
হলো ইউনাইটেড কিংডম। এটির বাংলা হলো
যুক্তরাজ্য। সমগ্র যুক্তরাজ্যকে আমরা
একেকজন একেক নামে ডাকি। অনেকে
মনে করেন, ইংল্যান্ড মানেই হলো
যুক্তরাজ্য। আবার কেউ কেউ মনে
করেন গ্রেট ব্রিটেন মানে যুক্তরাজ্য।
আবার অন্যরা মনে করেন ব্রিটেন মানেই
যুক্তরাজ্য। আসলে কোনোটিই ঠিক নয়।
আসল নাম হলো, যুক্তরাজ্য। একটি বিষয় জানা
দরকার যে, চারটি প্রদেশ বা অঞ্চল নিয়ে
যুক্তরাজ্য গঠিত। এগুলো হলো ইংল্যান্ড,
ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর
আয়ারল্যান্ড। ব্রিটেন বলতে বোঝায়
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস। গ্রেট ব্রিটেন
বলতে বোঝায় ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং
স্কটল্যান্ড। আর যুক্তরাজ্য বা ইউকে
বলতে চারটি প্রদেশকেই অর্থাৎ ইংল্যান্ড,
ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও উত্তর
আয়ারল্যান্ডকে বোঝায়। স্কটল্যান্ডের
রাজধানী এডিনবার্গ। প্রসিদ্ধ শহর
গ্ল্যাসগো। উত্তর আয়ারল্যান্ডের
রাজধানী বেলফাস্ট। ওয়েলসের
রাজধানী কার্ডিফ। ইংল্যান্ডের রাজধানী
লন্ডন। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার,
সমগ্র আয়ারল্যান্ড ইউকের অংশ নয়।

মন্তব্যসমূহ